We offer comprehensive digital solutions including web development, brand creation, trend analysis, style consulting, product promotion, blog advertising, and SEO — all tailored to meet client and market needs.

বইঃ হুজুরের বউ (Hujurer bow) - খাদিজা বিনতে মুজাম্মিল (Khadija Bint Muzammil) || সব পর্ব একসাথে। পিডিএফ ডাউনলোড

বইঃ হুজুরের বউ (Hujurer bow) - খাদিজা বিনতে মুজাম্মিল (Khadija Bint Muzammil) || সব পর্ব একসাথে। পিডিএফ ডাউনলোড

নামঃ হুজুরের বউ (Hujurer bow)
লেখক : খাদিজা বিনতে মুজাম্মিল
প্রকাশনী : আবরণ প্রকাশন (থানবি লাইব্রেরী)
বিষয় : ইসলামী সাহিত্য, গল্প-উপন্যাস এবং সফরনামা, পরিবার ও সামাজিক জীবন
ইনার সজ্জাঃ মুমিনুল ইসলাম ও হাসান।

সায়মা জানালার দিয়ে বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে।কারণ আজকে সকালে নাস্তা করার সময় তার মা তাকে বলেছে আজকে নাকি কোন পাত্র পক্ষ তাকে দেখতে আসবে।

তাকে আবার পাত্রের সামনে নিজেকে লম্বারুপে উপস্থাপন করতে হবে তাই হীল (উঁচু জুতা) পড়তে হবে। নিজের মুখের শ্যামলা চামড়াকে ডেকে রেখে সুন্দর চামড়া উপস্থাপনের জন্য একগাধা মেকআপ লাগাতে হবে। তারপর তাদেরকে কত আবল তাবল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এই পারে কিনা সেই পারে কিনা... খুবই বিরক্তকর। এর জন্য সায়মার মন খারাপ।একদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে আসে সে।

এটাই যে সায়মার জন্য প্রথম এমন টা না। এর আগেও অনেক বার তাকে এইভাবে বাজারের পণ্যের মতো সাজগোজ করে পাত্র পক্ষের সামনে উপস্থাপন হতে হয়েছে। কিন্তু শাক দিয়ে কি মাছ ডাকা যায়.?? পাত্র পক্ষ ঠিকই বুঝতে সায়মা যে শ্যামলা, খাটো একটা মেয়ে। তাই তারা পিছপা হয়ে যায়। যে কয়জন সামনে এগিয়ে আসে তারা আবার কিছু না কিছু (যৌতুক) আশা করে। কিন্তু সায়মাদের মধ্যবিত্ত ফ্যমিলির জন্য তো, তা খুবই কষ্টকর।তার বাবার পক্ষে দুই মেয়ে, দুই ছেলে সহ সাত জনের ফ্যামিলি চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।তার উপর যৌতুক তো পাহাড় পরিমাণ বোঝা।যা সায়মার বাবার পক্ষে বহন করা মোঠেও সম্ভব না।তাই সায়মার বিয়েও হচ্ছে না।

- কিরে এখনো রেডি হসনি।তারা তো বাজারের কাছে চলে আসলো। আর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে তারাতারি রেডি হয়ে নে।(সায়মার মা)

মায়ের উচু আওয়াজের শব্দ শুনে সায়মার ধ্যান ভাঙে।

সায়মাঃ জি রেডি হচ্ছি।

সায়মার মা : কপাল টা ভালো কইরা ওয়ালের লগে ঘইসা লইচ। পোড়া কপাল যেন ভালো হয়। এবার যেন তোকে এই বাড়ি থেকে বিদায় দিতে পারি সেই দোয়া কর।

কথাগুলো বলে সায়মার মা রান্নাঘরে চলে যায়। সায়মা একটা মুচকি হাসি দেয়।

আপনারা ভাবছেন কি ব্যাপার...! সায়মার মা তাকে এত বড় কথা বলছে। অথচ সে হাসছে..?

জী সায়মা হাসছে।কারণ কথাগুলো তাকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। এসব কথা শুনতে শুনতে সায়মা অভ্যাস্ত হয়ে গেছে। তার বাবা তাকে মুখে না বললেও তার মা তাকে সরাসরি এসব কথা প্রতিদিন ই বলে।কারণ তার জন্য তার ছোট বোন মারিয়া কে (চামড়ার সুন্দরি) বিয়ে দিতে পাচ্ছে না। কত ধনী ধনী ছেলেরা মারিয়া বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়।কিন্তু যখন শুনে মারিয়ার বড় বোন সায়মার এখনো বিয়ে হয় নি। তখন তারা পিছপা হয়ে যায়।এক সময় এসব কথা শুনে সাময়া প্রচুর কান্না করতো।কিন্তু এখন হয়তো চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে তাই কান্না আর আসে না। তাই তো সে মায়ের এমন কথা শুনেও মুচকি হাসি দেয়।

তারপর সায়মা উঠে বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধৌত করে এসে তোয়ালে দিয়ে পানি মুছে নেয়। তারপর জামা চেঞ্জ করে অন্য একটি নরমাল জামা গায়ে দেয়।তারপর হালকা ক্রিম মুখে লাগিয়ে নেয়। সায়মার কাছে এখন আর এত এত কসমেটিক্স লাগাতে, শাড়ি পড়তে ভালো লাগেনা। অনেক তো কসমেটিক্স ব্যবহার করলো, শাড়ি পড়লো কি লাভ হলো.? তাই আর তার এগুলো ব্যবহারের ইচ্ছে করে।যা হবার হবে।

সায়মার মাঃ কিরে এখনো রেডি হস নি.? পাত্র পক্ষ তো চলে আসলো।

সায়মাঃ জী মা..আমি রেডি।

সায়মার মাঃ কই রেডি। তোর চেহারা এমন ক্যা..মুখে কিচ্ছু লাগাস নাই। আর শাড়ি পড়স নাই ক্যান।

সায়মা: মা.... এগুলো পড়তে আর ভালো লাগেনা। আমি এভাবেই যাবো।

সায়মার মাঃ তা ভালো লাগবো কি করতে। তুই তো চাস তোকে যেন তারা পছন্দ না করে।তোর জন্য আজ মারিয়াকে বিয়ে দিতে পারছি না। দে ধর...অন্তত হীল পড়ে যা নাস্তা নিয়ে যা।আমাকে উদ্ধার কর।

সায়মা হীল পড়ে মায়ের হাত থেকে নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে সামনের রুমে যায়। তাদের না দেখে সায়মা সালাম দেয়। তারপর তাদের দিকে তাকাতেই সায়মা হতভম্ব হয়ে যায়।

পাত্র পক্ষ থেকে মাত্র দুই জন লোক আসছে।একজন ছেলে আর একজন মেয়ে। মেয়েটি আপাদমস্তক কালো কাপড় (বোরকা) দ্বারা আবৃত।

বোরকা আবৃত মহিলাটি সায়মার সালামের জবাব দেয় এবং তাকে সোফায় বসতে বলে।

সায়মা টেবিলের উপর নাস্তার ট্রে রেখে সোফায় বসে।সায়মা খেয়াল করে এখানে তার পক্ষের কোন লোক নাই।এখানে শুধু মাত্র তারা তিনজন।বোরগা আবৃত একটা মহিলা,একটা হুজুর,আর সে..?

এই মহিলা কে..? আর এই হুজুর টাই বা কে..? এই মহিলা এই গরমের ভিতর কিভাবে এই কালো বোরকা পড়ে বসে আছে।গরম লাগে না বুঝি..? (সায়মা মনে মনে কথা গুলো ভাবে)।

সায়মার কাছে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ মনে হচ্ছে।

-কেমন আছো মা...?

মা.....এমন স্নেহ ভালোবাসার 'মা' ডাকটি সায়মা সর্বশেষ কবে শুনেছে।সে নিজেই ভুলে গেছে। তাই সে আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। সায়মা নিজেকে কন্ট্রোল করে জবাব দেয়...

- জী।ভালো আছি।

- পড়া লিখা কতটুকু করেছো .?

- জী আমি অনার্স শেষ করেছি। মাস্টার্সে ভর্তি হবো।

- মা-শা-আল্লাহ। তো মা... নিয়মিত নামাজ পড়া হয় তো..?

সায়মা অন্যান্য পাত্র পক্ষদের মিথ্যা বললেও আজ কেন জানি তার মিথ্যা বলতে তার ইচ্ছে করছে না।

- ঠিক নিয়মিত নামাজ পড়া হয় না।মাঝে মাঝে মিস হয়।

- এ কি মা... এটা কিন্তু ঠিক না। মুসলমান হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে নিয়মিত নামাজ পড়া।

-হুম। (মাথা নেড়ে)

- তোর কিছু বলার বা জানার আছে..? (হুজুরের দিকে তাকিয়ে)

- জী মা... উনার সাথে আলাদা ভাবে কিছু বলতে চাই।


- তোর কিছু বলার বা জানার আছে..? (হুজুরের দিকে তাকিয়ে)
- জী মা... উনার সাথে আলাদা ভাবে কিছু বলতে চাই।
ওরে আল্লাহ... তাহলে এই হুজুর ছেলেটিই পাত্র...? বাবা মা শেষ মেস আমাকে এই খ্যাত হুজুরের সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছে.? আমি তাদের কাছে এতটাই বোঝা হয়ে গেলাম.?এই হুজুররা তো হলো রাজাকার, দেশদ্রোহী। ছোট বেলা থেকেই নাটক,সিনেমায় দেখে আসছি মুক্তিযুদ্ধে যারা রাজাকার ছিল, যারা মা বোনদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তারা এই রকম দাড়ি টুপি ওয়ালা ছিল। এরা পুরো খ্যাত, আনরোমান্টিক। না... না... এই ছেলের সাথে সংসার করা যাবে না।এই ছেলেকে বিয়ে করা প্রশ্নেই আসেনা। (সায়মা মনে মনে কথা গুলো ভাবে)

- মা... তোমার কাকা বা দাদা কেউ বাসায় আছে..?

- না।দাদা অনেক আগেই মারা গেছেন।কাকারা অনত্র থাকে।

- ও আচ্ছা। তাহলে তোমার ছোট ভাই একটা আছে না। ক্লাস সিক্সে নাকি সেভেনে পড়ে।

- জী। জীবন। ক্লাস সিক্সে পড়ে।

- হুম।তাহলে তুমি একটু উঠে গিয়ে তোমার মা আর তোমার ভাইকে একটু ডেকে আনো।

- ঠিক আছে।

সায়মা উঠে গিয়ে তার ভাই ও তার মাকে ডেকে আনে।

- সাহেদ.... তোমরা বরং অন্য রুমে গিয়ে কথা বল।আমি আপার সাথে কথা বলছি।

- তোমরা বরং দক্ষিনের রুমে আলাদা কথা বল।এই সায়মা তুই তোর রুমে নিয়ে যা। বাবা তুমি ওর সাথে যাও।( সায়মার মা)

- ওদের একা আলাদা রুমে কথা বলতে দেওয়া ঠিক হবে না।শরীয়তে নিষেধ আছে। জীবন.. তুমিও ওদের সাথে যাও।

ওমা..এটা আবার কি। বিয়ে করবো আমরা।আলাদা ভাবে কথা বলবো আমরা এটাই স্বাভাবিক। এখানে আবার জীবনকে কেন নিতে হবে। এই হুজুরদের সব অভ্যুদ নিয়ম। না... না... এই হুজুরকে বিয়ে করে যাবে না। এই হুজুরকে বিয়ে করলে আমার জীবন পুরো তেজপাতা হয়ে যাবে।না....না... আমি উনাকে বলে দিবো আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। আচ্ছা.... আমি যদি বলি আপনাকে বিয়ে করতে পারবে না আর উনি যদি বাবা মাকে বলে দেয় তাহলে তো বাবা মা অনেক কষ্ট পাবে।আমি তো ফ্যামিলির জন্য একটা আপদ। ফ্যামিলির জন্য অনেক বড় বোঝা। এই হুজুরকে বিয়ে করলে অন্তত বাবা মা খুশি হবে। মা বাবার খুশির জন্য না হয় উনাক বিয়ে করে নি। আচ্ছা... আমি যে উনাকে বলছি বিয়ে করবো না...? আমাকে উনার পছন্দ হবে তো..? আমি তো সুন্দর না,খাটো।(কথাগুলো হাটতে হাটতে মনে মনে ভাবে সায়মা)

- এটা আপনার রুম..?

- জী... এখানে আমি আর ছোট বোন থাকি। বসুন...।

- মা-শা-আল্লাহ অনেক সুন্দর। বই পড়তে ভালোবাসেন.? (সাহেদ খেয়াল করে টেবিলের উপর অনেক গুলো বই)

- এই কম বেশি পড়া হয়।

- কার বই বেশি পড়া হয়.?

- হুমায়ুন আহমেদ স্যারের।

- ইসলামিক বই পড়েন না।

- না... মানে.. তেমন পড়া হয় না।

-মুসলমান হিসেবে ধর্মীয় এলেম জানার জন্য ধর্মীয় বই পড়া তো দরকার তাই না..?

- হুম ( মাথা নেড়ে)

- আপনার তো হীল পড়ে হাটতে কষ্ট হচ্ছে। বসুন। আর স্বাভাবিক স্লিম জুতা পড়ে হাটলেই ভালো।কষ্ট ও হবে না।পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।

- হুম (মাথা নেড়ে)

সাহেদের কথা শুনে সায়লা লজ্জিত হয়।

- নিয়মিত কোরআন পড়া হয়..?

- ইয়ে মানি... না। সময় পাই না।

- সময় পান না..? কি যে বলেন.. হুমায়ুন স্যারের বই পড়ার সময় পান। কোরআন পড়ার সময় পান না। এটা খুবই লজ্জার ব্যপার না...?

সায়মা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে।

-আচ্ছা আমার আর কিচ্ছু জানার নাই।আমার সম্পর্কে কি জানতে চান।

- আর কিছু জানার নাই আমার সম্পর্কে.? (কিছুটা অবাক হয়ে।)

- আর কি বা জানার আছে..?একটি মেয়ের বিয়ের জন্য রান্নাকরা ,সেলাই করা,ঘর গোছানো,ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি জানা বাধ্যতামূলক নয়।সময়ের ব্যবধানে মানুষ এমনিই সব শিখে নিতে পারে।আপনার কোন কিছু জানার আছে.?

- জ্বী না।

- আচ্ছা তাহলে চলুন।উনারা অপেক্ষা করতেছে।

-হুম চলুন।

তারপর তারা সামনের রুমে আসে। তারপর হালকা নাস্তা করে সাহেদ আর তার মা সায়মার থেকে বিদায় নেয়।

না... এই টাও হবে না। এক হ্রাস হতাশা নিয়ে সায়মা তার রুমে চলে আসে।

- কিরা কি বুঝলি..? তোকে পছন্দ হয়েছে..? (সায়মার মা)

- না। (মাথা নেড়ে)

- তোর মত কপাল পোড়ারে কে পছন্দ করবে। বলছি শাড়ি পড়তে।একটু সাজগোজ করতে। না..হেতেন এই ড্রেসেই যাবে। সাজগোজ করতে হেতেনের ভাল লাগে না। নিজের তো বিয়ে হচ্ছে না আমার মাইয়াডারও বিয়ে হতে দিচ্ছে না। আস্ত কপাল পোড়া মাইয়া।

কথাগুলো বলতে বলতে রান্না ঘরে সায়মার মা চলে যায়। সায়মা বুকভরা হতাশা নিয়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।আর ভাবতে থাকে আসলেই তো আমি সময় করে ঠিকই হুমায়ুন স্যারের বই পড়ি অথচ সর্বশেষ কবে কোরআন পড়েছি তাও তো মনে নেই।নিজেকে মুসলমান দাবি করি অথচ আমি নামাজ পড়ি না। না... আজ থেকে নামাজ মিস দিবো না।ইনশাল্লাহ।

তারপর থেকেই সায়মা নামাজ পড়া শুরু করে দেয় পরের দিন ইশার নামাজ পড়ার পর সাময়াম মনে হলো কোরআন মাজিদ টি খুলে দেখি। সায়মা উঠে গিয়ে তাকের উপর থেকে কোরআন মাজিদ টি হাতে নেয়। পরিস্কার একটা কাপড় দিয়ে ধুলাবালি পরিস্কার করে নেয়। সায়মার নিজের কাছেই খারাপ লাগে যে, গল্পের বই গুলোকে কত যত্ন করে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।অথচ যেই বই তাকে মুক্তি দিবে সেই বইকে কত অযত্নে পেলে রেখেছে।

সায়মা সুরা ইয়াছিন পড়া শুরু করে।অনেকদিন না পড়তে পড়তে এক প্রকার কোরআন পড়া সে ভুলেই গেছে। অনেক কষ্টে সুরা ইয়াছিন পড়া শেষ করে। কোরয়ান মাজিদে একটা চুমু দিয়ে সায়মা আর তা তাকে না রেখে টেবিলের উপর রেখে দেয়।

[বিঃদ্রঃ নেকির উদ্দেশ্যে কোরআন মাজিদে চুমু দিলে বিদায়াত হবে।আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এর জন্য চুমু দিলে সমস্যা নাই]

টেবিলে কোরআন মাজিদ রেখে সায়মা টেবিলের উপর মাথা রেখে নানা বিধ চিন্তা করতে থাকে।

- এই সায়মা.... সায়মা.... কপাল মনে হয় খুলেছে... ছেলের পক্ষ ফোন দিছে। তারা নাকি সামনে এগুতে রাজি। ( দৌড়ে আসতে আসতে)

সায়মা লক্ষ করে তার মায়ের মুখে অনেক হাসি । অনেক দিন পর মায়ের মুখে এমন হাসি দেখেছে সে। মায়ের হাসি দেখে সেও মুচকি হেসে দেয়।

সায়মার মা চলে যাওয়ার পর সায়মা নানা বিধ চিন্তায় পড়ে যায়।

সায়মা লক্ষ করে তার মায়ের মুখে অনেক হাসি । অনেক দিন পর মায়ের মুখে এমন হাসি দেখেছে সে। মায়ের হাসি দেখে সেও মুচকি হেসে দেয়।
সায়মার মা চলে যাওয়ার পর সায়মা নানা বিধ চিন্তায় পড়ে যায়।
ছেলের পক্ষ রাজি তার মানে বাবা মাও রাজি হবে। এই হুজুর ছেলেটার সাথে আমি সংসার করবো কিভাবে?এরা তো আমাকে আবদ্ধ করে রাখবে।ঘর থেকে বের হতেই দিবে না।কারো সাথে কথা বলতে দিবে না। নিজের স্বাধিনতা বলতে কিচ্ছু দিবেনা। ও.... আল্লাহ আমি কি জীবনেও সুখ পাবো না..?

সাহেদের কথামত এক সপ্তাহ পর কোন ঝাঁকঝমক অনুষ্ঠান ছাড়াই তাদের বিয়ের আকদ মসজিদেই ইশার নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয়। ছেলের পক্ষ থেকে শুধু মাত্র কয়েকজন মুরুব্বি এসেছে। তাও সাহেদ রাজি ছিলনা। সায়মার বাবার বার বার বলাতে সাহেদ এক প্রকার বাধ্য হয়ে কয়েকজন মুরুব্বীদের সাথে এনেছিল। কারণ সাহেদ অনেক আগেই প্রতিজ্ঞা করেছিলো 'বরযাত্রী হয়ে যাবোনা,বরযাত্রী নিবো না' এটা ছেলেদের পক্ষ থেকে মেয়েদের উপর মস্তবড় জুলুম।

মধ্যবিত্ত হলেও সায়মার স্বপ্ন ছিল তার বিয়েতে ছোটো খাটো হই হুল্লোল হবে।সবাই আনন্দ উল্লাস করবে।কিন্তু না ছেলের পক্ষ তা করতে দেয় নি তাদের কথা হলো নাকি হাদিসে আসছে ** যে বিয়েতে খরচ কম, এবং সহজ- সেই বিয়ে বেশি বরকত ময়।** বায়হাকী,
মিশকাত-পৃ: ২৬৭। তাছাড়া উত্তম মসলিসে বিয়ে হলে ভালো হয়।তাই তারা আকদ মসজিদেই করতে আগ্রহী প্রকাশ করছে।

যখন মসজিদে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় তখন সাহেদের বোন শুমি সায়মাকে কনের সাজানোর আইটেম দেখায়।। পাত্র পক্ষ থেকে সাজানোর আইটেম দেখে সায়মা সহ সবাই অবাক হয়ে যায়। একটা ফুলহাতা থ্রী পিস, আর একটি কালো বোরকা সাথে বড় একটা নিকাব। আর হাত মুজা, পা মুজা।

-এগুলো কোন বিয়ের সাজের আইটেম হলো..? (সায়মা মনে মনে ভাবে)

সায়মার মনের অবস্থা শুমি বুঝতে পারে।

- আসলে ভাবী ... আমাদের ফ্যামিলি অনেক ধার্মিক আলহামদুলিল্লাহ। অবশ্য আমার পোষাক দেখেও তা বুঝতে পারছেন। আমরা কোথাও বের হতে এগুলো পড়েই বের হই।

- আচ্ছা আপু। এমনে বোরকা পড়লে হবে না। সাথে এগুলোও পড়তে হবে..?

- হুম ভাবী।এটা আল্লাহর হুকুম। আল্লাহ্‌ বলেন -ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। -সূরা নূর :৩১

এছাড়াও আল্লাহ আরো বলেন -হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)’’

আগে কখনো পড়েন নাই তো তাই আপনার কাছে কেমন কেমন লাগছে।পড়া শুরু করলে আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন।এটাই সবচেয়ে নিরাপদ পোষাক।

- হুম। ( মাথা নেড়ে)

মাথা নাড়া ছাড়া তার আর কোন উপাই নাই।এখানেই তাকে বিয়ে করতে হবে।তাই পাত্র পক্ষ যাই বলতে তাকে তাই শুনতে হবে।

- আচ্ছা আমরা আগে নামাজ পড়ে নিই।তারপর যাওয়ার আগে এগুলো পড়ে নিয়েন।(শুমি)

- হুম (মাথা নেড়ে)

সায়মা আর শুমি অজু করার জন্য উঠে গেলে সায়মার আত্মীয় স্বজন নানা ধরনের কথা বলতে শুরু করে।সায়মার মা সব সহ্য করে নেয়।এছাড়া যে তার কোন উপাই নাই। মেয়ের বিয়ে হচ্ছে এটাই অনেক।তাও আবার যৌতুক ছাড়া।

নামাজের পর আকদ সম্পন্ন হওয়ার পর সাহেদ সহ পাত্র পক্ষের মুরুব্বিরা সায়মাদের বাড়িতে আসে। সায়মার বাবা তাদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে। সায়মার বাবা তার ভাইদের নিয়ে মেহমানদের মেহমানদারি করে।

পাত্র পক্ষ যখন খাবার খাচ্ছিলো তখন সায়মা আর শুমি নামাজ শেষ করে ঘরে খাবার গ্রহণ করে।

খাবারের সব আয়োজন শেষ হওয়ার পর সায়মার খালা মামীরা সায়মার বাবার মাধ্যমে সাহেদের কাছে খবর পাঠায় সে যেন ঘরে আসে কনের সাথে বসে। তাহলে সবাই তাকে কোলে নিবে,দোয়া করবে।

- বাবা... মনে কষ্ট নিবেন না।আপনি তাদের বলে দিন এভাবে জামাইকে কোলে নেওয়া অপসাংস্কৃতি ও শরীয়াহ পরিপন্থী কাজ।এতে পর্দার হুকুম লঙ্গন হয়।আপনি বরং উনাদের বলে দিন উনাকে (সায়মা) দোয়া করতে তাহলেই আমাদের জন্য দোয়া হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

- না... আসলে বাবা.... তোমাকে তারা কিছু দিতে চায়। নতুন জামাই হিসেবে সায়মার খালা মামীরা তোমায় কিছু দিতে চায়।

- বাবা... আমাকে কিছু দেওয়া লাগবে না। আমাদের জন্য দোয়া করলেই হবে।

- তারপরেও বাবা...

- বাবা...উনারা যদি একান্তই কিছু দিতে চায়।তাহলে উনাকে দিলেই হবে।সরাসরি আমাকে দিতে হবে এমন কোন বিধান নাই।তাছাড়া বাবা... ছেলেদের স্বর্ণ ব্যবহার নিষেধ। - সহীহ বুখারী :৫৮৬৪,আহমদ :৬৯৪৭,২২২৪৮

সায়মার বাবা সাহেদের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ঘরে এসে জানিয়ে দেয়।জামাই দেখা দিবে না।পর্দার বরখেলাফ হবে।

তারপর অনেকে কানাঘুষা করতে থাকলে উপস্থিত সবাইকে সুমি বুঝিয়ে দেয় যে আপনাদের সাথে দেখা দেওয়া ভাইয়ার জন্য হারাম।আপনারা ভাইয়ার জন্য গায়রে মাহরাম। একটা ছেলে মা,খালা,ফুফু,শাশুড়ি,
দুধ-মা,বোন,দাদি,নানি,নাতনি,দুধ-বোন,মেয়ে,ভাই-এর মেয়ে,বোনের মেয়ে,ছেলের বউ,দুধ মেয়ে ছাড়া অন্যদের সাথে দেখা দিতে পারবে না।

তারপর সায়মার খালা মামীরা সায়মাকে দোয়া করে এবং হাদিয়া দেয়। তারপর সায়মা কালো বোরকা, নিকাব, হাত- পা মুজা পড়ে নেয়।

কলেজে তথাকথিত বোরকা পড়ে গেলেও এই প্রথম সায়মা এমন পোশাক পড়েছে।তাই সায়মার নিজের কাছে হিজিবিজি মনে হচ্ছে। কেমন এক অস্বস্তিকর অবস্থা মনে হচ্ছে। ব্যপার টি সুমি বুঝতে পারে।

-ভাবী... প্রথম এমন পোষাক পড়েছেন তো.. তাই হয়তো কেমন কেমন লাগছে। পড়া শুরু করলে নিজেই বুঝতে পারবেন এই পোষাকটাই সবচেয়ে নিরাপদ পোষাক।

- হুম।(মাথা নেড়ে)

- খালাম্মা... এবার মেয়েকে বিদায় দিন।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।

বিদায়ের কথা শুনে সায়মার হার্টবিট বেড়ে যায়। কান্না চলে আসবে আসবে মনে হচ্ছে।নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে মায়ের দিকে তাকায় সে।

সায়মার মা সায়মার সামনে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।তখন সায়মা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কান্না করে দেয়।

তারপর সায়মার মা সায়মাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে বিদায় দেয়। সায়মা শুমির হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে গাড়ির সামনে যায়। সেখানে সায়মার বাবা দাড়িয়ে ছিলেন।সায়মার বাবা সায়মাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর সায়মার বাবা সায়মাকে দোয়া করে এবং বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়।

সায়মা আর সুমি গাড়ির পিছনে বসে। সাহেদ তার শশুর থেকে বিদায় নিয়ে ড্রাইবারের পাশের সিটে বসে। ড্রাইবার গাড়ি স্টাট দেয়। সায়মা রওনা দেয় এক ভিন্ন পরিবেশে অচেনা মানুষের সাথে।


সায়মা আর সুমি গাড়ির পিছনে বসে। সাহেদ তার শশুর থেকে বিদায় নিয়ে ড্রাইবারের পাশের সিটে বসে। ড্রাইবার গাড়ি স্টাট দেয়। সায়মা রওনা দেয় এক ভিন্ন পরিবেশে অচেনা মানুষের সাথে।
গাড়ি চলতে চলতে এক সময় সাহেদের বাড়ির সামনে এসে পৌছে।সাহেদের বাবা আর মা তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সাহেদ গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। সুমি আর সায়মা গাড়ি থেকে নেমে ঘরে প্রবেশ করে। সাহেদ ড্রাইবারদের ভাড়া পরিশোধ করে তাদের বিদায় দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।

সায়মা তার শশুর বাড়ি প্রবেশ করে পুরোই অবাক।এই বাড়িতে যে বিয়ে হচ্ছে তা বুঝাই যাচ্ছে না। ।বাড়িতে তেমন কোন মেহমান নাই।সাহেদের মা সায়মাকে বুকে টেনে নেয় এবং কপালে একটা চুমু দেয়। সায়মা তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কান্না করে দেয়। এই রকম আদর ভালোবাসা সে কবে পেয়েছে সে নিজেই ভুলে গেছে।

- দূর পাগলি মেয়ে.. এভাবে কান্না করতে হয়.? এক মা ছেড়ে আসলে কি হবে। আমি আরেক মা আছি না।.?

এই কথা শুনার পর সায়মা আরো জোর করে তার শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর শুমি সায়মা কে নিয়ে তার রুমে নিয়ে যাই।

- ভাবী... এগুলো খুলে ফেলুন।একটু রেষ্ট নিন।

শুমির কথায় সম্মতি জানিয়ে সায়মা বোরকা ও নিকাব খুলে।কিছুক্ষণ পর সায়মার শাশুড়ি শরবত নিয়ে হাজির হয়।

- নে... মা... শরবত টা খেয়ে নে। অনেক জার্নি করে আসছিস। (সাহেদের মা)

-বাহ.. রে.. নতুন বউকে পেয়ে আমায় ভুলে গেছো..? আমি বুঝি জার্নি করেনি..? ( সুমি)

- দিবো একটা। নে ধর। খাইতে খাইতে তো এত বড় হইছস এখনো স্বাদ মিটে নাই। মা.. তুমি কিছু মনে করো না। আমার মেয়েটাই এমন।(শুমির দিকে তাকিয়ে)

শুমি তিন শ্বাসে শরবত পান করে। ( তিন শ্বাসে পানি পান করা সুন্নত - মুসলীম ২/১৭৪)

- মায়ের হাতের খাবারের স্বাদ কখনো মিটেনা। আর ভাবী আমরা এই রকম।সব সময় হাসি খুশীতে থাকার চেষ্টা করি।

কথাগুলো শুমি বলতে বলতে তার মাকে জাড়িয়ে ধরে আর তার মা হাসিমুখে শুমির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সায়মা এক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি... বন্ধুত্বপূর্ণ মা মেয়ের সম্পর্ক।

তারপর মা,মেয়ে আর নতুন বউ মিলে কিছুক্ষণ বিভিন্ন কথাবার্তা বলে। এদের সাথে কথা বলে সায়মা বুঝতে পারে এরা খুব ভালো মানুষ। খুব সহজেই অন্যকে আপন করে নেয়। এদের সাথে কথা বলতে বলতে সায়মা ভুলেই গেছে আজ এদের বাড়িতে সে বউ হিসেবে এসেছে।

- অনেক কথা হলো। রাত ও গভীর হয়ে যাচ্ছা। শুমি... যা.. বউমা কে সাহেদের রুমে দিয়ে আয়।

শাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে সায়মার হার্টবিট বেড়ে যায়।তাকে এখন এক অজানা অচেনা পুরুষের সাথে রাত যাপন করতে হবে। তাও আবার গেঁয়ো ভুত হুজুর।

সায়মা শুমির সাথে যাচ্ছে আর ভাবছে মানুষটা কেমন হবে...?তিনি কি এদের মতো এত ভালো হবে...? শুনিছি হুজুর রা খুব খারাপ হয়..? না..না..যার মা,বোন এত ভালো হয় নিশ্চয় সেও খুব ভালো হবে।

- ভাবী... এইটা হচ্ছে ভাইয়ার রুম।এখন থেকে এই রুম আপনারও। আচ্ছা আমি যাই। আপনি থাকেন আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়ালাইকুমুসসালাম।

শুমি চলে যাওয়ার পর সায়মা পুরো রুম একবার দেখে নেয়।খুব সুন্দর সাজানো গোছানো রুম। সাহেদ বই প্রেমিক। রুমে অনেক গুলো বই টেবিল ও বিভিন্ন স্থানে সাজানো গোছানো আছে।তারপর সায়মা গিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসে।

কিছুক্ষণ পর সাহেদ রুমে প্রবেশ করে এবং সায়মাকে সালাম দেয়।সায়মা সালামের জওয়াব দেয়।তারপর সাহেদ দরজা আটকিয়ে দেয়। দরজা আটকানোর সাথে সায়মার হার্টবিট বেড়ে যায়। এই বুঝি এই খ্যাত হুজুরটি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।

সাহেদ যত সামনে আসে সায়মার হার্টবিট তত বাড়তে থাকে।

- কেমন আছেন।

সায়মা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দেয় ভালো আছি।

- আপনার কি কোন সমস্যা হচ্ছে..? কন্ঠ টা কেমন কেমন মনে হচ্ছে।

- না.. আমি ঠিক আছি।

-আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের দুইজনকে বিয়ে নামক এক বড় দৌলত দান করেছে। আমাদের উচিত আল্লাহর শোকর আদায় করা। তাই আমি চাচ্ছি এখন দুই রকাত শুকরিয়ার নামাজ আদায় করবো।আপনি কি আমার সাথে আদায় করবেন..?

সায়মা আগে শুনেছে বাসর রাত্রে স্বামী স্ত্রী নাকি দুই রাকাত নামাজ পড়ে। তবে কিসের নামাজ পড়ে সে জানে না। যেহেতু নামাজ পড়ে জানে তাই সেও নামাজ পড়তে রাজি হয়ে যায়।

তারপর তারা দুই রাকাত শুকরিয়া নামাজ পড়ে এবং তাদের সুখ শান্তি কামনায় দোয়া করে।

- আপনি খাটে গিয়ে বসুন।আমি আসতেছি।

- হুম। (মাথা নেড়ে)

সায়মা খাটে গিয়ে বসে আর ভাবে এই বুঝি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।

কিছুক্ষণ পর খালিদ এসে সায়মার সামনে গিয়ে বসে।

- এই নিন। এইগুলো আপনার মহোরানার টাকা।

- এত টাকা...?

- এখানে মহোরানার পুরো ১ লাখ টাকা আছে। এগুলো আপনার।

- আমি এত টাকা দিয়ে কি করবো।

- রেখে দিন।আপনার যখন প্রয়োজন পড়বে তখন খরচ করিয়েন।

- এতগুলো টাকা আমাকে দেওয়ার কি দরকার ।

- কি বলেন এটা.... এটা আল্লাহর হুকুম। আপনার অধিকার। আল্লাহ বলেন: তোমরা খুশিমনে মহোরানা পরিশোধ করে দাও।(নিসা :০৪)

- আজকাল কেউ কি এগুলো মানে...?

- যারা মানে না তারা মারাত্মক গুনাহগার হবে। মহোরানা পরিশোধ ছাড়া স্ত্রীকে স্পর্শ করা জায়িজ হবে না। (বুখারী, মুসলীম, আবু দাউদ,নাসাঈ)

- একটা কথা বলি..?

- জী বলুন।

- আমার অনেক বান্ধুবীদের থেকে শুনেছি। বাসর রাত্রে নাকি স্বামীরা মাফ চেয়ে নেয়। কিংবা এমন ভাব ধরে যেন স্ত্রীরা মাফ করতে বাধ্য হয়।

- এটা মারাত্মক অন্যায়। এভাবে মাফ চেয়ে নিলে মাফ হবে না। অবশ্য মাফ চেয়ে নেওয়ার একটি কারণ আছে তা জানেন..?

- কী..?

-বর্তমানে মহোরানা নির্ধারণ করা হয় অনেক।যা ছেলের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব হয় না।তাই ছেলে ভয় ভীতি দেখিয়ে কিংবা অন্যান্য উপায় অবলম্বন করে মাফ চেয়ে নিতে বাধ্য হয়। অথচ নবীজী (সঃ) বলেন সর্বোত্তম মহোরানা হলো,যা আদায় করা সহজ হয়।(আবু দাউদঃ২১১৭)
আমার আপনার বিয়ের কথার সময় যখন মহোরানার ব্যপারটি আসে।তখন আপনার আব্বু ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু এতো টাকা পরিশোধ করা তো আমার পক্ষে সম্ভব না। তারপর আপনার আব্বুকে সব কিছু বুঝিয়ে বলে আমি ১ লাখ টাকায় রাজি করাই। উনারা মহোরানা বলতে বুঝে এটা কাগজে কলমে থাকবে পরিশোধ করতে হবে না। এটা উনাদের ভুল ধারনা নবীজী ( সঃ) বলেন - শর্তাবলীর মধ্যে যা পুরণ করার অধিক দাবী রাখে তা হলো সেই শর্ত (দেনমোহর আদায়ের) যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছো। (বুখারী-২৭২১,৫৫১)

-আরেকটা প্রশ্ন করি.?

- আপনি আমার স্ত্রী। আপনার প্রশ্ন করতে অনুমতি লাগবে না। বলুন।

- কিন্তু মহোরানা বেশি নির্ধারণ করলে তো একটা নিরাপত্তা থাকে। ডিভোর্সের সম্ভাবনা থাকবে না।

সাহেদ একটা মুছকি হাসি দিয়ে...

- আচ্ছা আপনাকে আমি বিয়ে করছি কেন..? ডিভোর্স দেওয়ার জন্য..? মোটেও না। আপনাকে আমি বিয়ে করেছি দ্বীন অর্ধেক পূরণ করার জন্য।(আল জামিউস সাগীর -৬১৪৮, মুসনাদে হাকিম - ২৬৮১)
আপনি আমার তাহাজ্জুদের সাথী হবেন।সুখে দুঃখে পাশে থাকবেন।একসাথে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবো। এখানে ডিভোর্সের কথা আসবে কোথ থেকে। যে বিয়ের আগে ডিভোর্সের কথা মাথায় আসে সে বিয়ে না করাই উত্তম।

- হুম ( মাথা নেড়ে)

- আচ্ছা ঐ ড্রায়ার তা আপনার। ঐখানে টাকা গুলো রেখে আসুন।পরে যখন আপনার প্রয়োজন পড়বে তখন খরচ করতে পারবেন।

সায়মা হ্যা সম্মতি দিয়ে উঠে গিয়ে টাকা গুলো ড্রায়ারে রেখে আসে।

- নিন... এটা বাসররাত্রে আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য উপহার।

- খুলতে পারি.?

- হুম নিশ্চয়।

সায়মা প্যাকেট টি খুলে এবং ভিতরে দেখে একটি জায়নামাজ, একটি মেসওয়াক, একটি তাজবিহ। বাসর রাত্র স্বামীর পক্ষ থেকে এমন উপহার পাবে সায়মা কল্পনাও করে নাই। সাহেদ কে সে কি বলবে নিজেও বুঝতেছেনা।

- টেবিলের উপর দুইটা কোরআন মাজিদ আছে। সবুজ রঙের কোরআন মাজিদ টিও আপনার জন্য।

- ধন্যবাদ। আমি জীবনে কল্পনাও করি নাই।বাসররাত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে এমন উপহার পাবো।

- আলহামদুলিল্লাহ।

- কিন্তু আমি তো জীবনে কখনো মেসওয়াক করি নি।

- আগে কখনো করেন নাই। আজ থেকে করবেন। মিসওয়াক করা সুন্নত। উম্মতের কষ্ট না হলে প্রত্যেক নামাজের অযুর আগে নবীজী (স) মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন।- বুখারী :৮৮৭,৭২৪০, মুসলীম, আবু দাউদ,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ।

জানেন... মেসওয়াক করে নামাজ পড়লে ৭০ গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।- মিশকাত :৩৮৯

মেসওয়াক হলো মুখ পবিত্র রাখার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপাই।- মিশকাত :৩৮১

মেসওয়াক করার দ্বারা স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায় ও কফ দূর হয়। -ফাজায়েলে মিসওয়াক :৬২

এছাড়াও মেসওয়াক এর ৭০ টিরও বেশি ফাজায়েল আছে।

- আমি কাল থেকে শুরু করবো।

- বলুন। আমি কাল থেকে শুরু করবো ইনশাআল্লাহ। কোন কাজ করার নিয়ত করার সময় ইনশাআল্লাহ বলতে হয়।

- ইনশাআল্লাহ।

- যাবেন..?

- কোথায়...?

- বাহিরে..?

- এখন..? এত রাতে..?

- সমস্যা নাই। আব্বু আম্মু এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। চলেন আমরা জোস্না উপভোগ করি।

বাসররাত্রে স্বামীর কাছে থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে সায়মা খুশিতে আত্মহারা।

- চলুন। (মুচকি হাসি দিয়ে)

- যাবেন..?

- কোথায়...?

- বাহিরে..?

- এখন..? এত রাতে..?

- সমস্যা নাই। আব্বু আম্মু এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। চলেন আমরা জোস্না উপভোগ করি।

বাসররাত্রে স্বামীর কাছে থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে সায়মা খুশিতে আত্মহারা।

- চলুন। (মুচকি হাসি দিয়ে)

তারপর তারা বাহিরে এসে পাশাপাশি দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জোস্না উপভোগ করে।

সায়মা খেয়াল করে সাহেদ কিছু একটা বলতে গিয়েও সংকোচ বোধ করে।

- আপনি কি কিছু বলবেন.?

- না... মানে। আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি.??

কথাটি বলে সাহেদ মাথা নিচু করে ফেলে।সায়মা মুচকি হেসে দেয়।তারপর সাহেদের দিকে হাতটি বাড়িয়ে দেয়। সাহেদ সায়মার হাত টি ধরে অনেক্ষন দাড়িয়ে থাকে তারা।তারপর তারা সিড়ির উপর গিয়ে পাশাপাশি বসে।

- জানেন..? আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাও সুন্নত। নবীজী (সঃ) মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।-সূরা বাকারাঃ১৪৪, মুসলীম : ২৫৩১।

- সত্যি..? আমার জানা ছিলো না।

- হুম।

- আচ্ছা একটা কথা বলি..?

- আপনাকে তো বললাম। অনুমতি লাগবে না।সরাসরি প্রশ্ন করে ফেলবেন।

- যেদিন আমায় দেখতে এসেছিলেন।আপনার সাথে কথা হওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমাকে আপনার পছন্দ হয় নি।কিন্তু পরে যখন খবর পাঠালেন আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে তখন আমি পুরো অবাক হয়ে যায়। সত্যি করে বলবেন...ঠিক কি কারণে আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে.?

- ( মুচকি হাসি দিয়ে) আসলে হাদিসে আছে পাত্রীর ৪টি জিনিস দেখে তাকে বিবাহ করা যায় -১)সম্পদ ২) বংশ মর্যাদা ৩)সৌন্দর্য ৪) দ্বীনদারী। আর দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।-বুখারী:৫০৯০ মুসলীম১৪৬৬

আমারো স্বপ্ন ছিলো কোন দ্বীনদারীকে বিয়ে করবো। সত্যি কথা বলতে আপনার সাথে কথা বলার পর বুঝতে পারলাম আপনার মাঝে আমলের অনেক ঘাটতি আছে।বাড়িতে এসে মায়ের সাথে কথা বলার পর মা আমাকে ইস্তেখারার আমল করতে বলেন। হাদিসে আছে নবীজী (স:) সাহাবাদের ইস্তেখারার আমল এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন,যেভাবে কোরআনের সূরা কে শিক্ষা দিতেন।-বুখারী :১১৬৬

- ইস্তেখারা..? এটা আবার কী..?

-ইস্তেখারা একধরনের আমল। কারো যদি কোন মুবাহ বা জায়েজ করার আগে এই কাজটি করবে..? নাকি করবে না..? এমন সন্দেহ দেখা দেয় কিংবা মনস্থির করতে না পারে।তখন বিশেষ এক পদ্ধতিতে আল্লাহর নিকট মজ্ঞল প্রার্থনা করাকে ইস্তেখারা বলে।

-ও...

- মা,বাবা, আমি,শুমি আমরা সবাই আমাদের বিয়ের ব্যপারে ইস্তেখারার আমল করি এবং সবাই পজেটিভ নির্দেশনা পাই।যেহেতু আল্লাহ আমাদের পজেটিভ নির্দেশনা দিয়েছে।তাই আল্লাহর উপর তায়াক্কুল করে আমরা সামনে এগুলাম এবং আজ আপনি আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে পাশে বসে আছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

সাহেদের কথা শুনে সায়মা অবাক হয়ে যায়। আজকাল যুগে এমন মানুষও আছে..? সাহেদের কথা শুনতে শুনতে সায়মার চোখে অটোমেটিক পানি চলে আসে।

- একি... আপনার চোখে পানি কেন..? আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন...? আসলে আমি মানুষটাই এমন।সব সময় সত্য কথা বলি দিই।জানেন তো কথায় আছে সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।তাছাড়া মিথ্যা বলা মুনাফেকির আলামত - বুখারী :৩৩,৬০৯৪
আল্লাহ মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করেছেন।(হজ্জ : ৩০)

- না.. আমি কষ্ট পায়নি। এমনে চোখে পানি চলে আসলো। এই পানি কষ্টের নয় আনন্দের। আপনি খুব ভালো মানুষ।

তারপর সাহেদ নিজের হাতে সায়মার চোখের পানি মুছে দেয়।

-জানেন.. স্ত্রীর চোখের পানি মুছে দেওয়াও সুন্নত।(নাসাঈ)

- আগে জানতাম না।এখন জানলাম।আলহামদুলিল্লাহ।

আচ্ছা আপনার সম্পর্কে তো আমি কিছুই জানি না।শুধু জানি আপনার নাম সাহেদ।এছাড়া আর কিছুই জানি না। আসলে বাবা মা আমার বিয়ের জন্য যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে তাই পাত্র কি করেনা করে তা জানার ও প্রয়োজন মনে করি নি।

- এটা কিন্তু ঠিক না। যাকে বিয়ে করবেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত ছিল। যাই হোক আমি সাহেদ।নাম তো জানেন। আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আপাতত বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে আছি।

- আপনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার..? আপনি হুজুর না..?

- মানে...

- আপনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, অথচ আপনার মুখে দাড়ি,মাথায় টুপি, গায়ে লম্বা পাঞ্জাবী (জুব্বা), পুরো হুজুরের মতো..?

-( মুচকি হাসি দিয়ে) আচ্ছা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে দাড়ি টুপির কি সম্পর্ক..? দুনিয়ার জীবিকার তাগিদে আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমি তো শেষ নবীর উত্তম। আমার উচিত উনার সুন্নত গুলোকে অনুসরণ করা। দাড়ি,টুপি, এগুলো নবীজীর সুন্নত।

আল্লাহ বলেন,"(হে নবী)" আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর।তবে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।-সূরা আলে ইমরান :৩১

আল্লাহ আরো বলেন, তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর জীবনীতে উত্তম আদর্শ। - সূরা আহযাব:২১

দাড়ি রাখা সুন্নত। রাসুল ( সঃ) নিজে দাড়ি রেখেছেন উম্মতকে মোচ কেটে ফেলা ও দাড়ি লম্বা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। -বুখারী :৫৮৯৩,মুসলিম :৬২৬,৪৮৯

(বিঃদ্রঃ দাড়ি সংক্রান্ত হাদিস সমূহে 'আমর'এর সীগাহ (আদেশসূচক শব্দ) ব্যবহৃত হয়েছে।তাই এই ব্যপারে সকল আলেমগন একমত দাড়ি রাখা ওয়াজীব)

তাই আমি জীবিকার তাগিদে যাই করিনা কেন। আমাকে আমার নবীজী (স:) এর সীরাত সূরত অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে।

- কিন্তু দাড়ি রাখার তো একটা বয়স আছে।তাই বলে এই বয়সে রাখতে হবে..?

- ইন্নালিল্লাহ... এটা কি বললেন।এই কথা আর কখনো বলবেন না।তওবা করে নিন। দাড়ি রাখার নির্দিষ্ট কোন বয়স নাই।যারা বলে দাড়ি রাখার নির্দিষ্ট বয়স আছে কিংবা দাড়ি রাখার এখনো বয়স হয় নি। তাদের ঈমান আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
#স্রাষ্টার_উপর_সৃষ্টির_হাত_দেওয়া_মোটেও_উচিত_না। আল্লাহ পাক সবচেয়ে ভালো জানেন কার কখন দাড়ি উঠা দরকার।নারীকে দাড়িতে মানাবে না,তাই আল্লাহ নারীকে দাড়ি দেয় না। কিন্তু দাড়িতে পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় তাই আল্লাহ পুরুষদের দাড়ি দান করেন।অতএব, কারো দাড়ি উঠলে যে যদি তাতে হাত দেয়( কেটে ফেলে) সে মারাত্মক গুনাহগার হবে। মনে রাখবেন আমি মারা যাওয়ার পর আমার সমস্ত দৃশ্যমান সুন্নত খুলে রেখে দিবে।একমত্র দাড়ি ছাড়া। আমি মারা গেলে আমার পাঞ্জাবি, টুপি,পাগড়ি এগুলো খুলে রেখে দিবে।কিন্তু একমাত্র দাড়ি আমার সাথে আমার কবরে যাবে।তাই আমাদের উচিত আল্লাহ আমাদের যখন থেকে দাড়ির নেয়ামত দিবে তখন থেকে তা লম্বা করা।

- হুম।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর

-জানেন.. আপনি না খুব সুন্দর।

- আমাকে খুশি করার জন্য বলেছেন তাই না..?

- না..সত্যি বলছি।

- (মুচকি হাসি দিয়ে) আমি জানি আমি একটি শ্যামলা, খাটো মেয়ে।তাই আপনার আগে আমাকে অনেকে দেখে ফিরে গেছে।

- সত্যি আপনি খুব সুন্দর। একটা কথা বলুন তো..?

- জী বলুন.?

- আমার আগে আপনাকে যারা দেখতে এসেছিল তারা কি আমার মতো হুজুর ছিলো..?

- না। তারা শ্যার্ট,প্যান্ট পরিহিত ছিল।

- হুম।এই জন্যই। আসলে তারা তো মেয়েদের সাথে ফ্রি ভাবে চলাফেরা করে।ফলে তারা দুনিয়ার সাদা চামড়ার মেয়ে দেখতে দেখতে তাদের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।তাই তাদের কাছে আপনাকে শ্যামলা বা কালো মনে হয়।কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমরা হুজুররা তো কোন মেয়ের দিকে তাকাই না। চোখ পড়ে গেলেও সাথে সাথে নামিয়ে ফেলি।ফলে নিজের স্ত্রীকে যখন দেখি তখন তাকে পৃথীবির সবচেয়ে সুন্দরীরুপে দেখী। আলহামদুলিল্লাহ।

সাহেদের কথা শুনে সায়মা অবাক হয়ে যায়।কি বলবে নিজেও বুঝতেছেনা।

- জানেন হাদিসে আছে যখন স্বামী স্ত্রী একে অপরের দিকে প্রেম ও মুহাব্বতের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের উভয়ের প্রতি রহমতের দৃষ্টি বর্ষণ করেন। (বুখারী :৬১৯) একটু এদিকে তাকান।আপনাকে মন ভরে একটু দেখি।

সাহেদের কথা শুনে সায়মা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।তারপর একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।

না... দাড়িওয়ালা হুজুররা খ্যাত আর আনরোমান্টিক হয় না। এরাই পৃথীবির শ্রেষ্ঠ সুন্দর ও রোমান্টিক হয়।সত্যি দাড়িওয়ালা ইজ দ্যা বেষ্ট।কথাগুলো সায়মা মনে মনে ভাবে।

-

- আচ্ছা চলুন।অনেক রাত হয়ে গেছে।

- (মুচকি হাসি দিয়ে) চলুন।

দিন যত যায় সাময়া বুঝতে পারে হুজুরদের সম্পর্কে তার পূর্বে যে ধারনা ছিল দেশদ্রোহী, রাজাকার, খ্যাত,আনরোমান্টিক সব তার ভুল ছিল।
সাহেদের দাদা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।একাত্তরে অনেক রাজাকার ছিলো যাদের দাড়ি টুপি কিছুই ছিলোনা। মুলত এক ধরনে স্বার্থান্বেষী মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে ইসলাম কে হেও করার জন্য নাটক,সিনেমাতে রাজাকারদের দাড়ি টুপি ব্যবহার করে।যাতে তরুণ প্রজন্ম হুজুরদের তথা ইসলামকে ঘৃণা করতে শিখে।সাহেদের সাথে বিয়ের পর আস্তে আস্তে সায়মার এসব ভুল ভাঙে। সাহেদ খুবই দেশপ্রেমিক মানুষ। প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ নামাজের পর দেশের শান্তির জন্য সাহেদ দোয়া করে। তাছাড়া এলাকার যে কোন বিপদে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করে।

বিয়ের ২য় দিন রাত্রে হঠাৎ ঘুমের ভিতর সায়মা বুঝতে পারে কে জানি তার মুখের উপর পানির ছিটকা দিচ্ছে।সায়মা চোখ খুলে দেখে তার সামনে সাহেদ দাড়িয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

- কি ব্যপার এত রাতে... আপনি কি ঘুমান নি.? নাকি শরীর খারাপ করতেছে।

- আরে না।আমি ঠিক আছি।ঘুম ও গেছি।আলহামদুলিল্লাহ

- তাহলে.?

- তাহাজ্জুদের সময় হয়েছে।আপনাকে কয়েকবার ডাক দিছি কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছি না। তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করলাম। হাদিসে আছে -

আল্লাহ সেই পুরুষের উপর সন্তুষ্ট হন, যে রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে ও ইবাদত করে এবং এরপর সে তার স্ত্রীকে ডেকে দেয় আর যদি সে ওঠতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে মুখে পানির ছিটা দিয়ে তার ঘুম ভাঙায়।
- মুসনাদে আহমদ :৭৪০৪, আবু দাউদ :১৩১০

[বিঃদ্রঃ হাদিসের অপর অংশে স্ত্রীদের কথা বলা হয়েছে।অর্থাৎ স্বামী অস্বীকৃতি জানালে স্ত্রী তার মুখে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙালে আল্লাহ স্ত্রীর উপর সন্তুষ্ট হন]

ঘুম ভাঙাতে সায়মার একটু রাগ হলেও সাহেদের মুখে হাদিসের উদ্ধৃতি শুনে আর রাগ করে থাকতে পারে নাই। পরে ঘুম থেকে উঠে অজু করে এসে দুইজনে একসাথে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে।নামাজ শেষে তারা আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে দোয়া করে।

দোয়া শেষ করে দুইজনে খাটের উপর এসে বসে।

- আপনি কি রোজ রাত্রে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন..?

- জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ।

- এটা তো ফরজ ইবাদত না।প্রতিদিন পড়তে হয়..?

- ফরজ ইবাদত না তাতে কি.. মুসলিম হিসেবে তাহাজ্জুদ আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।নিঃসন্দেহে এটা প্রত্যেকের জন্য অতি জরুরী আমল। তাহাজ্জুদ মুমিনের সম্মান। যারা একান্তে দীর্ঘ সময় আল্লাহর সাথে কাটাতে চায়, তাদের উচিত বেশি বেশি সময় তাহাজ্জুদে ব্যয় করা।

তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা খুব বেশি পছন্দ করেন। তাদেরকে মর্যাদা দান করেন। আল্লাহ বলেন-

‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ প্রতিষ্ঠা করুন, এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত, আশা করা যায় আপনার প্রভু এর দ্বারা আপনাকে প্রশংসিত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)।

এছাড়াও তাহাজ্জুদের সময় দোয়া ও ফরিয়াদ কবুলের উত্তম সময়। তাহাজ্জুদ সালাতের সময় প্রার্থনা করলে মানুষের মনের সব আশা পূর্ণ হয়। হাদিসে আছে -

‘যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন স্বয়ং আমাদের প্রভু পরোয়ারদিগার দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলতে থাকেন, ওগো! কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দিয়ে দেব। ওগো! কে আছ যে, এ সময় আমার কাছে গোনাহ থেকে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (বোখারি : ১১৪৫)।

হাদিসে আরো আছে-

রাতের বেলা এমন একটি সময় আছে, যে সময় একজন মুসলীম আল্লাহর কাছে উত্তম যা-ই চাইবে আল্লাহ তাকে তাই দেবেন।- মুসলীম :১৮০৭

এছাড়াও এ সময় মানুষের মনের মধ্যে একাগ্রতা বেশি থাকে। আশপাশের পরিবেশ কোলাহলমুক্ত থাকে। দুনিয়াবি বিষয়ের প্রতি খেয়াল কম থাকে।আল্লাহর কাছে একাগ্রতা নামাজ খুবই পছন্দনীয়। আল্লাহ বলেন-

‘নিশ্চয়ই ওইসব ঈমানদার সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের সালাতের খুশুখুজুর সঙ্গে আদায় করে।’ (সূরা মোমিনুন : ১-২)।

এই সময় নামজ পড়লে একাগ্রতা বা গভীর মনোযোগ সহকারে নামাজ পড়া যায়।তাই আমি নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ি। আলহামদুলিল্লাহ

- আজ থেকে আমিও আপনার তাহাজ্জুদের সাথী হতে চাই। আমিও নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বো ইনশাআল্লাহ। আমি যদি ঘুম থেকে উঠতে অলসতা বা অস্বীকৃতি জানাই তাহলে আপনি আমায় পানির ছিটা দিবেন আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবেন।

- ইনশাআল্লাহ।

দুইজনে মুচকি হাসি দেয়। কিছুক্ষণ পর তাদের কানে ভেসে আসে।পৃথীবির শ্রেষ্ঠ ধ্বনি "আল্লাহু আকবর"

সাহেদ মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আযানের জওয়াব দেয়।কারণ হাদিসে আছে

যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তার অনুরুপ বলবে।-বুখারী :৫৮৪
অপর হাদিসে আছে-
মুয়াজ্জিন যখন " হ্যাইয়া আলাসসলাহ" বলবে তখন " লা হাওলা ওলা কুউয়াতা ইল্লাবিল্লা"বলবে।- বুখারী৫৮৬

তারপর আযন শেষ হলে আযানের দোয়া পড়ে। বুখারী-৬১৪

- আপনি বসুন আমি দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে নিই। নফল ও সুন্নত নামাজ ঘরে পড়া উত্তম।(বুখারী)

তারপর সাহেদ দুই রাকাত ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করে।

সুন্নত নামাজ পড়ার পর সাহেদ খাটে গিয়ে সায়মার পাশে বসে।

- মসজিদে যাবেন না.?

- যাবো।

- তাহলে..?

- জানেন....ঘরে ফজরের সুন্নত নামাজ পড়ার পর কিছুক্ষণ স্ত্রীর সাথে কথা বলাও সুন্নত। (মিসকাত) তাই এখন আপনার সাথে এখন কিছুক্ষণ কথা বলব।

সাহেদের কথা শুনে সায়মা মুচকি হেসে দেয়।তারপর তারা কিছুক্ষণ বিভিন্ন কথাবার্তা বলে।

- আচ্ছা আমি জামাতে নামাজ পড়তে যাচ্ছি। আপনি নামাজ পড়ে নিন।

- ঠিক আছে।

- আমি একটা সুন্নত আদায় করতে চাই।

- হুম। করুন না। আমাকেও শিখিয়ে দিন।আমিও আদায় করবো।

-সত্যি..?

- হুম।আপনার মতো সুন্নতী জীবন আমিও গড়তে চাই।

- আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে শুনুন নবীজী কোথাও যাওয়ার আগে স্ত্রীকে চুমু দিতেন।

কথাটি বলে সাহেদ সায়মার কপালে একটু চুমু দিয়ে দৌড়।

- আরে.. আরে...

তারপর সায়মা মুচকি হাসি দেয়। এমন স্বামী পেয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে নামাজে দাড়ায়।

বিয়ের কয়েকদিন পর যেদিন শশুর বাড়িতে সায়মার ঘুমের ভিতর প্রথম হায়েজ শুরু হয়। সায়মার ভিতর একধরনের লজ্জার পাশাপাশি ভয় কাজ করছিল।
না জানি সাহেদ তার সাথে কি রকম আচরণ করে। এদিকে প্রচন্ড পেট ব্যথায় শোয়া থেকে উঠতে ও পারছে না।

- আপনি কি অসুস্থতা ফিল করছেন।

- হুম।( লজ্জা লজ্জায় মাথা নেড়ে)

সাহেদ বুঝতে পারে সায়মার হায়েজ শুরু হয়েছে।

- আমি আপনার স্বামী। আমাকেও বলতে লজ্জা পাচ্ছেন..? আচ্ছা বাদ দিন আপনার মনে হয় পেট ব্যথা করছে..?

- হুম( মাথা নেড়ে)

- বেশি..?

- হুম।( মাথা নেড়ে)

- আপনি শুয়ে থাকুন। আমি আসতেছি।

- এত রাতে কোথায় যাবেন..?

- কোথাও না।ঘরেই আছি । আপনি জামা চেঞ্জ করে শুয়ে থাকুন।

- হুম ( মাথা নেড়ে)

সাহেদ চলে যাওয়ার পর সায়মা উঠে জামা চেঞ্জ করে। ঘরে প্যাড না থাকায় অন্যন্যা পদ্ধতি অবলম্বন করে আবার এসে শুয়ে পড়ে।

এই পুরুষ মানুষ গুলোই এমন।স্ত্রী যখন সুস্থ থাকে তখন তাদের প্রেম উঠলে পড়ে।আর স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়ে যায় তখন আলাদা রুমে চলে যায়।( সায়মা মনে মনে কথা গুলো ভাবে)

কিছুক্ষণ পরে সাহেদ রুমে প্রবেশ করে।

- নিন... এটা পেটের উপর রাখুন।ব্যাথা কমে যাবে।ইনশাআল্লাহ।

- কি এটা..?

- ওয়াটার হট ব্যাগ।

- এত রাতে এটা কোথায় পেয়েছেন।

- ব্যাগ ঘরে ছিল।এখন শুধু রান্না ঘরে গিয়ে পানি গরম করে ব্যাগে ডুকিয়ে নিছি।

- আপনি এতক্ষণ রান্না ঘরে ছিলেন..?

- জ্বী।যে কোন ব্যথায় গরম ছ্যাক দিলে ব্যাথা কমে যায়।তাই আপনার জন্য পানি গরম করার জন্য গিয়েছিলাম।

সাহেদের কথা শুনে সায়মা মনে মনে লজ্জিত হয়ে যায়।

ইসস.. এই মানুষটাকে এখনো চিন্তে পারলাম না। যে মানুষটা আমার জন্য গরম পানি করতে গেছে।আর আমি কিনা তাকে নিয়া কি না কি ভাবছি ( সায়মা মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে)

- ঘরে তো প্যাড নাই। এত রাতে দোকানও খোলা পাওয়া যাবে না।

- সমস্যা নাই।আমি অন্য ব্যবস্থা করছি। সকালে এনে দিলেও চলবে।

- ঠিক আছে। আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করুন।আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

- অনেক কষ্ট করেছেন। আর কষ্ট করতে হবে না। আপনিও ঘুমান।

- না.. এখন আর ঘুমাবো না। তাহাজ্জুদের সময় হয়ে আসছে। আপনি ঘুমান।

তারপর সায়মা ঘুমানর চেষ্টা করে আর সাহেদ তার মাথায় উপর হাত বুলিয়ে দেয়। গরম ছ্যাক দেওয়ার পর আস্তে আস্তে পেটে ব্যথা কমতে থাকে এবং ব্যাথা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে।কখন যে সায়মার ঘুম চলে আসে সায়মা নিজেও বলতে পারবে না।

সকালে নাস্তার পর সাহেদ নিজ থেকেই সায়মার সাথে আলোচনা তার পছন্দের ব্যন্ডের প্যাড নিয়ে আসে। কারণ সাহেদ জানে এটা দায়িত্ব ও কর্বত্য। তাছাড়া হাদিসে নবীজী (সঃ) হায়েজ অবস্থায় নারীদের হায়েজে ইযার ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।( বুখারী)

- আমি জুময়ার নামাজ পড়তে যাচ্ছি। আপনাকে একটা ভালো পরামর্শ দিবো কি.??

- জ্বী বলুন।

- হায়েজ অবস্থায় তো নামাজ পড়া নিষেধ।বুখারী- ৩৩১
তো এই সময় যদি আপনি নামাজ সহ অনান্য ইবাদত থেকে বিরত থাকেন তাহলে আপনার ভিতর একধরনের অলসতা চলে আসবে। যা আপনি সুস্থ হওয়ার পর আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে সুস্থ হওয়ার পর ও আপনার নামাজ পারলে অলসতা লাগবে। তাই আপনি যদি নামাজের সময় অজু করে এসে জায়নামাজ বিচিয়ে জিকির আযকার, তাজবীহ তাহলীল সহ বিভিন্ন ধর্মীয় বই পাঠ করে সময় অতিবাহিত করেন।তাহলে আপনাকে অলসতা আর স্পর্শ করতে পারবে না।

- এই সময় জিকির আযকার করা যাবে.??

- হুম।আপনি এই সময় জিকির আযকার, তাজবীহ তাহলীল সহ বিভিন্ন ধর্মীয় বই পাঠ করতে পারবেন।তবে বই পড়ার সময় যেখানে কুরআনের আয়াত লিখা আছে সেখানে স্পর্শ ও পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন।( আহসানুল ফাতওয়া- ২/৭১)

- ঠিক আছে। তাহলে আপনি যান।আমি অযু করে জিকির আযকার করতেছি।

- আমি কি ঐ সুন্নত আদায় করতে পারি.???

- আমি তো অসুস্থ। এখনো কি ঐ সুন্নত পালন করতে পারবেন..?

- হুম। স্ত্রী হায়েজরত অবস্থায় স্ত্রী সহবাস নিষেধ।(আবু দাউদঃ৩৯০৬) তাছাড়া স্ত্রীর সাথে সমস্ত কার্যক্রম বৈধ।(আল-বাহরুর রায়েক- ১ম খন্ড)।তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

- তাহলে ঠিক আছে। সুন্নতটি আদায় করুন।( লজ্জা লজ্জা মুখে)

তারপর সাহেদ সায়মার কপালে চুমু দিয়ে মসজিদে চলে যায়।আর সায়মা অযু করে এসে জিকির আযকার ও বিভিন্ন ধর্মীয় কিতাবাদি পড়ে।

দুপরে ভাত খাওয়ার পর সায়মা আর সাহেদ তাদের রুমে আসে। সায়মা খাটের উপর বসলে সাহেদ গিয়ে সায়মার পাশে বসে এবং তার মাথা সায়মার কোলে উপর রাখে।

- আরে.. আরে... আপনি ভুলে গেছেন..? আমি যে অসুস্থ।

- না ভুলিনি..?

- তাহলে কোলে মাথা রাখলেন যে..?

- এখানে কোন সমস্যা হবে না। আয়েশা (রাঃ) হায়েজরত অবস্থায় ও নবীজী (স) উনার কোলে মাথা রেখে কোরআন তেলোয়াত করতেন। বুখারী -২৯৭

- সত্যি..?

- জ্বী। এবার আমায় মাথা রেখে ঘুমাতে দেন তো..?

- না..?

- কেন..?

- নবীজী কোরআন তেলোয়াত করতেন আর আপনি ঘুমাবেন...? আপনি যদি কোরআন তেলোয়াত করেন তাহলে কোলে মাথা রাখতে দিবো।

সায়মার কথা শুনে সাহেদ মুচকি হেসে দেয়।

তারপর সায়মার শর্তে সাহেদ রাজী হয় এবং সায়মার কোলে মাথা রেখে সূরা ইয়াছিন যতটুকু পারে ততটুকু তেলোয়াত করে।

রাতে খাবারের পর ঘুমানোর আগে অন্যদিন একটা কাঁথা থাকলেও সায়মা আরেকটি কাঁথা নামিয়ে রাখে।

- কি ব্যাপার আজ কাঁথা দুইটা কেন..? ঠান্ডা তো পড়ছে না।

- ঠান্ডার জন্য না। আজ আপনি একটা আমি আরেকটা দিয়ে ঘুমাবো।

- ওমা... এই শাস্তি কেন..?

- শাস্তি হবে কেন..? যে কয়দিন অসুস্থ থাকবো সে কয়দিন আলদা আলাদা কাঁথা গায়ে দিবো।একই খাঁথায় ঘুমানো উচিত হবে না।

- কে বলছে উচিত হবে না। জানেন...

সালমা (রা) এর হায়েজ অবস্থায় ও নবীজী উনাকে ডেকে একই চাদরের নিচে ঘুমিয়ে ছিলেন।- মুসলীম ৩/২-২৯৬, আহমদ :২৬৫৮৭

একটা কাঁথা রেখে দিন।আমরা একই কাঁথা গায়ে দিয়েই ঘুমাবো।তারপর সায়মা একটি কাঁথা রেখে দিয়ে অন্য কাঁথা দিয়েই দুইজনে ঘুমায়।

হায়েজরত অবস্থায় সায়মা যত সাহেদ থেকে একটু দূরে দূরে থাকতে চায় সাহেদ হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে দিয়ে সায়মার আরো তত কাছে ঘেষে থাকে।

অন্যসময় নিজে নিজে মাথা আঁচড়ালেও সায়মার অসুস্থতার সময় সায়মাকে আচঁড়ে দিতে বলতো।পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দিতে বলত। যাতে এই সময় সায়মার কাছাকাছি বেশি থাকা যায়।

সায়মা পানি খেয়ে গ্লাস রাখলে সাহেদ আবার গ্লাস হাতে নিয়ে সায়মার মুখ লাগানো অংশে মুখ লাগিয়ে পানি খায়। সায়মা মাছ বা মাংস খেয়ে কাটা বা হাড় রাখলে সাহেদ তা নিয়ে তাতে আবার মুখ লাগাতেন।কারণ নবীজী ও এমন করতেন।(মুসলীম ৫৭৯)

সাহেদ মাঝে মাঝে রাত্রে সায়মাকে নিয়ে বাড়ির ভিতর হাটতে বের হতো এবং গল্প করতো। কারণ নবীজী এমন করতেন।- বুখারী -৫২১১

দিন যত যায় সায়মা আর সাহেদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়তেই থাকে। সাহেদ যখন মেসওয়াক করে রাখতো তা সায়মা নিয়ে নিজে মেসওয়াক করতো।কারণ এমন টা আয়েশা (রঃ) করতো। -আবু দাউদঃ৫২

তাদের এই ভালোবাসার ভিতর যে তাদের নিকট দুঃখ কষ্ট আসেনি।এমন টা না। সায়মা যখন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন সাহেদের কোম্পানির একটা কাজে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।ফলে সাহেদ তার কয়েক মাসের বেতন পাচ্ছিলো না।একদিকে সাংসারিক খরচ,অন্যদিকে সায়মার বাড়তি যত্ন,মায়ের ওষুধ কিন্তু তার হাতে টাকা নাই। সব যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু তখনও তারা হতাশ হয় নি। কারন তারা জানে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য পরিক্ষা। আল্লাহ বলেন-

আমি অবশ্যই তোমাদিগকে পরিক্ষা করবো কিছুটা ক্ষুদা,মাল,ও জানেত ক্ষতি করে ও ফল ফসালি নষ্ট করে।তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।-
সূরা বাকারাঃ১৫৫

সায়মা আর সাহেদ সবর করে সাথে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যাবতীয় বিপদ থেকে হেফাজতের জন্য দোয়া করে। কারণ কোরআনে আছে-

"হে ঈমানদারগন,তোমরা ধৈর্য্য এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো" সুরা বাক্বারা-১৫৩

সায়মার যখন কন্য সন্তান জন্ম হয় সাহেদ সাথে সাথে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে।

কন্যা সন্তান আসার সাথে সাথে সাহেদের ঘরে রহমত প্রবেশ করে। কন্যার ৩য় দিন খবর আসে।সাহেদের কোম্পানির যে সমস্যা ছিল তার সমাধান হয়ে গেছে। ফলে সে তিন মাসের বেতন একসাথে পাবে। খবর টি পাওয়ার পর সাহেদ আল্লাহর শোকরিয়া আদায় কর।

খুব সুন্দর ভাবে তাদের বাকি জীবন অতিবাহিত হয়।মাঝে মাঝে আল্লাহর পরিক্ষার সম্মুখীন হয়।ধৈর্য্য আর নামাজের মাধ্যমে তার সমাধান করে।
যে সায়মা আগে ভুল ধারনার জন্য হুজুরদের ঘৃণা করতো আজ সে সায়মা নিজেকে #হুজুরের_বউ বলে গর্ববোধ করে। শুধু কি তাই..? আজ সে দুইজন হুজুরের মা, তিনজন হুজুরের শাশুড়ি।

সমাপ্তি

বইঃ হুজুরের বউ (Hujurer bow) - খাদিজা বিনতে মুজাম্মিল (Khadija Bint Muzammil) || পিডিএফ ডাউনলোড

إرسال تعليق

(AD) Sticky